তুমি যখন একা থাকবে জানালার পাশে গ্রীল
ধরে দাঁড়িয়ে
তখন দেখতে পাবে দূরে বেদনায় নীল সমুদ্র
ঘুরে বেড়ায়,
এক পাশে ঝাউ বন আর অন্য পাশে রঙিন মানুষ।
বেদনায় নীল সাগরের বুকের সকল কষ্ট গুলো
তীরের উপরে আছড়ে পড়ছে আর বলছে
আমি আর গভীর তলের বেদনা সইতে পারছি না,
আমাকে মুক্ত করো।
সমুদ্রের সাদা রঙের ফেনারা জানিয়ে দেয়
তার অশ্র“বেদনা।
তার স্মৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকা পাথর-কাঁকরের
ঘর্ষণে
নীল কষ্ট গুলো সাদা ফেনায় রূপ নিয়েছে।
সমুদ্র জানিয়েছে ঐ নীলিমা নাকি তার ব্যথায়
ব্যথিত।
সে তার কষ্ট অনুভব করে নীল রঙকে ধারণ করেছে।
কিন্তু না! নীলিমা তার বেদনাকে ছুড়ে ফেলে
দিয়েছে
সমুদ্রের বুকে তাই সমুদ্রের রঙ নীল।
আমি সমুদ্র, কী এমন ক্ষতি করেছি,
কী এমন আচরণ করেছি যে আমার বুকে
ছুড়ে দেয়া হয়েছে এতো কষ্ট, রঙে নীল।
আমি সমুদ্র, কী এমন অপরাধ করেছি
যে আমার বুকের উপরে উড়ে বেড়ানো গাঙ চিলেরা
ছোঁ মেরে দৃষ্টি শক্তিকে নষ্ট করে দিয়েছে।
আমি সমুদ্র, কী এমন দোষ করেছি
যে আমার বুক চিরে বয়ে যায় কতো শত বেদনার
জাহাজ
আর নোংরা আবর্জনার স্তুপ।
জানি, কোনো উত্তর নেই।
মানুষ কখনো নিজ অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইবে
না,
চাইবে না তাদের হিসাবের খাতা শূন্য পড়ে
থাক।
তুমি দূরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে
দেখবে
আর মনে মনে ভাববে, তার কাছে যাবো। মৃদু স্বরে বলবে,
আমি তোমাকে ভালবাসি।
কিছুক্ষণ তুমি হেঁটে বেড়াবে আমার বুকের
মাঝে,
তারপর-
আমাকে নোংরা করে দেবে, ঘোলা করে পদাঘাত করবে
আর বলবে “বাই বাই” সমুদ্র।
তুমি হয়তো আমার কথা মনে রাখবে না,
ক্ষণিকের আনন্দ দিয়ে আমার নিকট থেকে
ভালবাসা কেড়ে নিলে আর দিয়ে গেলে অজস্র
বেদনা।
তুমি ঘুরে বেড়াও রঙ বেরঙের বসন পরে
ঐ দূর প্রান্তে, তোমাকে আর ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না।
কিন্তু আমার তো নীল বেদনা কখনও ছাড়লো না,
এই বেদনারা আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে
যায় আর বলে,
তোর জন্ম হয়েছে সকল কষ্টকে হৃদয় মাঝে লুকিয়ে
রাখার জন্য।
আমি সমুদ্র, কীভাবে লুকিয়ে রাখবো, আমার
বেদনার সীমা এতো বেশি হয়েছে যে তার পরিমাপ
করা
সম্ভব নয়। শত চেষ্টায়ও পারিনা
লুকিয়ে রাখতে,
মাঝে মাঝে অমাবশ্যায়, পূর্ণিমায় সেই বেদনা আমাকে
দুমড়ে মুচ্ড়ে দিয়ে তীরে ফুঁসে উঠে।
বন্ধু তুমি, তোমরা ঘুরে বেড়াও, মাঝে মাঝে
আমাকে এসে দেখে যেও, আমি অসহায় এই ভেবে,
সহস্র জনম ধরে বইবে আমার বুকের নীল বেদনা
যে বেদনা তোমাদের কউকে কখনও স্পর্শ করবে
না।