(২) দ্বিতীয় অংশ
ছোট্ট ছেলে টগর আর ছোট্টটি নেই। সে এখন অনেকটাই বড়, বয়সে মাপকাঠিতে। ঠিক তোমাদের মত
জানালায় বসে ভাবেÑ এখন কি করা যায়? এম.এ পাস করে টগর জীবন ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরেছে। ছোটখাটো একটা চাকরিও আছে বটে। লিখতে তার বেশি
ভাল লাগে, তাই পড়াশুনা তেমন মনোযোগী ছিল না ছোটবেলা থেকে। শৈশব-কৈশর সেতুপুর
পল্লীতে কাটে বলে পল্লী মায়ের অনেক রূপ সে দেখেছে। সময় পেলেই বসে যায়
কবিতা-গানের ডালিতে। অনেক রাত তার কবিতা লিখে কাটে। ঘুম তার চোখে আসেনা বললে চলে। তার শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ
“নন্দিতা” অনেকটা ঢেউ তুলেছে মানব হৃদয়ে।
তবে এই কবিতাটি তাকে আমার কাছে বিচিত্র করে তুলেছে,
রাতের সূর্য
আকাশের বুকে যখন পূর্ণিমার চাঁদ
ছুটে চলেছে
তখন তুমি গভীর নিদ্রায়
স্বপ্নের দীঘিতে
সাঁতার কাটো
পদ্ম-পাপড়ির দোলায়।
কখনো কখনো
প্রাসাদ ছাপিয়ে
চলে আসে
রাজ লক্ষ্মীর উচ্চস্বরের হাসি;
আমি গম্ভীর হয়ে যাই
দু’এক টুকরো মেঘ দেখে,
কখনোবা হুতুম পেঁচার ডাকে।
আমার চোখ দুটি ভেসে যায়
ঐ দূর চাঁদের দেশে, চাঁদের সাথে;
বিরতি পড়ে গভীর নীলে, চাঁদের খেঁয়ায়
এ কোন চলমান ধবধবে সাদা সূর্য?
আমি ভুল করিনি তার সৌন্দর্য্য দেখতে।
সাদা সূর্যই আমার ঘুম ভাঙায়- ডেকে তোলে,
আজও তুলেছে নরম বিছানা থেকে
নিদ্রতুর ঘুম ভাঙিয়ে।
তুমি হয়তো দেখতে পাও না কাঁজল আঁকা চোখেতে-
তবে দীর্ঘ দিনের অভ্যাস,
চাঁদের সাথে খেঁয়া পারাপার,
তার সাথে ভেসে বেড়ানো আমার দু’টি চোখ
প্রতিনিয়ত দেখছে
তোমাকে।
কারো প্রতিক্ষাতে
নয়,
সাদা সূর্যের দেশে আমি ভেসে চলি
তোমাদের অলখে নিখিলের অসীম সীমানায়।
কিছুটা বিরহ আন্দাজ করে প্রশ্ন করি, জবাবটা এমনই-
‘দুঃখ-কষ্ট থাকতে
পারে কিন্তু কবিতার জগত ভিন্ন। ভাবের উদয়, আবেগের উৎপাত, উল্লাস ইত্যাদির আনাগোনা সবসময় লেগে থাকে কিন্তু সবার মনে নয়। আমার জগতে সবাই
নিরস্ত্র, কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা নাই।’
তার ঘনিষ্ট বন্ধু, সবুজ। কর্মঠ কিন্তু খামখেয়ালী। দূরালাপনে বেশ কথা হয় তাদের। সবুজ তার হাতিয়ার
বটে, তার সাথে কথপোকথনে টগর বেশ কাব্য উপজিব্য
বিষয় খুঁজে পায়। সাহিত্য অনুরাগী টগর-কে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কিন্তু বাস্তবার
অনেক কিছু সে না দেখে লিখে দিতে পারে, ঘটনা কেমন হতে পারে অথবা কি ঘটতে যাচ্ছে।
টগর রাত জেগে একটা পত্র লিখল এবং অসংখ্য জল্পনা-কল্পনায় রাত পার করতে থাকে। রাত তিনটা, কিন্তু ঘুম আসেনা। অনেক দিনের পুরোনো বন্ধু দিপু-র সাথে দেখা হয়েছে। তার স্বামী বাড়ি
না থাকায় আগামীকাল শুক্রবার তার বাড়িতে নিমন্ত্রন আছে। তাছাড়া সকল আলাপ শেষ না করেই আসতে হয়েছে। কত কথা জমে আছে তার শেষ নেই, কালকে অবশ্যই তাকে বলতে হবে।
চিন্তার পরিসমাপ্তি
ঘটিয়ে ঘুমের দেশে চলে যেতেই স্বপ্ন পরীর আর্বিভাব। চাঁদের দেশে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার বায়না, ছোট ছোট বাচ্চাদের
হাসি মাখা মুখ আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয় তাকে। স্বপ্নে বিভোর, হঠাৎ এলার্ম বেজে
উঠলো। সকাল সাতটা। তার মনে হল, দিপুদের বাড়িতে যেতে হবে, আজ শুক্রবার। হন্তদন্ত হয়ে পত্রটি পকেটে গুজে দু’টি রুটির সাথে আলু
ভাঁজি মুখে পুরে টগর রওনা দিল দিপু-র উদ্দেশ্যে।-----
নতুন নতুন কবিতা পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটে
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz