Sunday, July 20, 2014

Exclusive Love Story- Atoppor-অতঃপর-(শেষ অংশ)

(৩) শেষ অংশ
সকাল দশটাদিপু টগর-এর অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছেসব আয়োজন সমাপ্তহঠা কড়া নাড়ল সদর দরজায়দরজা খুলতেই অনেক লোকের ভিড় দেখে আতকে উঠে দিপু-র স্বামী সজীব জিজ্ঞাসা করলকি হল, সবাই এত ভিড় করেছেন কেন? আর এই লোকটি বা কে? পাশ থেকে একজন বলে উঠল, দাদা- লোকটি অনেক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছিল আর বিড়বিড় করে কি-সব উল্টাপাল্টা বকছিলসন্দেহ হল তাই ধরে এনেছি
আচ্ছা, ঠিক আছে! আপনার নাম কি? কোথা থেকে এসেছেন? লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন সজীব সাহেবউত্তরে আগান্তুক বলল, দিপু কে? তাঁকে একটু ডেকে দিন না! খুব দরকার!

কেন, কি হয়েছে? আমায় বলুন, আমি তার স্বামী

টগর নামে এক ভদ্রলোক এই পত্রখানা দিয়েছেতিনি এখানে আসতে গিয়ে সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেনমুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন

মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল সকল ব্যক্তির হৃদস্পন্দনএমন একজন ব্যক্তি, যে-কিনা এমন একটা খবর আনল, তাকে সন্দেহের বসবর্তী হয়ে হেনস্থ করল! অবশ্য না বুঝে করেছেবাড়ির ঠিকানা ঠিক-ঠাক না বুঝতে পেরে বিড়বিড় করে পড়ছিল, এই বাড়িটা হবে, না--- ঐ বাড়িটা হবেসজীব সাহেব সবার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন, ইনি আমার অতিথি

আগান্তুককে বসার ব্যবস্থা করে পত্রখানা দিপু-র হাতে দিল
দিপু পত্রখানা পড়তে শুরু করল-

দিপু,
এটা তোমার কাছে লেখা আমার প্রেম পত্র নয়Ñ সেটা হলে অনেক দ্বিপক্ষীয় দ্বিধা-সংশয়-সংকোচ জাপটে ধরবেতবুও বলছি-
না চাইতে প্রেম-ভালবাসা আমি সবাইকে দিয়ে থাকি, তার উপলক্ষ্য মাত্র উন্মোচিত হলআবার, ভুল বুঝে দূরে সরে যেও নাবিধাতা আমাকে সেই প্রেম-ভালবাসা দিয়েছে অফুরন্ত, না হয় কিছুটা তোমায় দিলাম
আমি আবার বলছি, এটা তোমায় লেখা প্রেম পত্র নয়, আমার হৃদয়ের কথাঅনেক দিনের জমানো কথা, শেষ হবে না এক পাতায় তবুও বলছি, আমি সেই মানুষকে ভালবাসি যার সুন্দর একটা মন আছে, রূপের অহংকার থাকে না
ছোটো কালে মানুষ না-চিনে কথা কইতাম, কিন্তু আজ মানুষকে চিনতে শিখেছি, তাই চোখ দু’টি দেখলে মুখমন্ডলে ভেসে উঠে তার ভেতরকার ছবি- পড়তে শিখেছি সেই ছবির ভাষা
আমি শান্ত ও চঞ্চল প্রকৃতিকে বেশি ভালবাসি তাই যেখানে শান্ত ও দুষ্ট-মিষ্ট ভাবের আদান-প্রদান ঘটে সেখানে আমার অবস্থান দীর্ঘ হয়, নয়তোবা চলে যাই সীমাহীন আড়ালে, খুঁজে পাওয়তো দূরে থাক স্বপ্নেও দেখা মেলে না
আমার দু’টি রূপ আছেএকÑ পাগলামি-
গাছ-প্রকৃতি, চাঁদের আলো, জোনাকি আমাকে ডাক দিয়ে যায়দুই- অনাচার মুক্ত সভ্য সমাজে বেঁচে থাকার ক্ষুদ্র প্রয়াসÑ কিছু কিছু খারাপ প্রবণতা থেকে বিরত রাখি এই প্রেমী সত্ত্বাকে
খুব শিঘ্রই আরেকটি রূপের সন্ধান মিলবে, অপেক্ষায় আছি, পেয়েও যাব
জানি অনেক বাঁধা পেরোতে হবেকিন্তু ভয় পাই না সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়াÑ একটু ভীত হই যন্ত্রনার আগুনেঅনেক পুড়েছি তুষের মতো, এবার কয়লা হতে চাই, যার অনেক মূল্য আছে কর্মকারের উঠানে
একটা স্বপ্ন আছেÑ
পতœী রূপে কাউকে পাওয়াএ---ই--- শ্যামলা বরণ, প্রকৃতির মত রূপ মাধুর্য্যে ভরা, পিতার ইচ্ছে সঙ্গিতে হাতে খড়ি রয়েছে এমন
যথার্থ বিচারে হয়তো গেঁয়ো, কিন্তু সবুজ বনানী শুধু গাঁয়ে দেখা যায়, শহরে শুধু ধোঁয়া-শব্দের মিতালীতাই নিজেকে গেঁয়ো বলতে ভালবাসি
ভাবছ, এতো কথা কেন?
বন্ধুকে চিনে নিয়ো, কষ্ট যাতে না হয়

--হারিয়ে যাবে কাগজটি, সংরক্ষণের জায়গা এখনো তৈরি হয়নিতবে কথাগুলো এ-মন থেকে কখনো মুছবে না

এখন দিগন্তে চেয়ে কিছু স্বপ্নের আলোক রেখা দেখি, কাল হয়তো সেটাও থাকবে না এ-জীবনেদৃষ্টিতে ভাঁটা পড়বে, প্রদীপ নিভে যাবে ঝড়ো বাতাসে আর কলমটি শিয়রে কাঁদবে

আমার কলমকে তুই দেখে রাখিস
সে বড় একা
নিশি-দিন থাকত সাথে
প্রিয় সে-সখা
শুধু বাস্তবতায় নয় আঁকা
কল্পতেও সে ছিল
আমার হাতে ছোঁয়ানো
ময়ূর পাখা

অনন্ত দুঃখেও ছাড়িনি তাকে,
ভীত হয়নি মরণটাকে দেখে;
তার শেষ আশ্রয়টা
কোথায় মিলবে?
আমি আঙুল তুলে দেখিয়ে গেলাম
তোর দিকে
তুই যত্ন করে রেখে দিস
আমার প্রিয় সখা

হেয়ালির আঁড়ালে লুকাতে ভালবাসিমেঠ পথে গাইতে ভালবাসিশুধু চাই না দোয়েল-শ্যামার পাকা বাড়িএকটি কথা-
কতো কাজ বাকি, বলতে পারিস? পারিশ্রমিক পাব তো আমি? আচ্ছা! ভুল হলে ক্ষমা করে দিস

শত-সহস্র কথার মাঝে
আমি এঁকে যাব তোদের চিহ্ন,
তোরা অপর ন’স
তোরা-আমি অভিন্ন;
সংক্ষিপ্ত পরিসরে   নীরালা কুঠিরে
রাত্র জেগে বৃষ্টির আবেগে
লিখেছি যা
তা অতি নগণ্য
পাত থেকে ফেলে দেওয়া
খাবারের উচ্ছ্বিষ্টের মত জঘন্য,
যাঁদের করতে চেয়েছি অনন্য-
আমি বরাবর-ই তাঁদের কাছে বন্য,
তবুও আমি যে ধন্য
তোদের ভালবাসা অনুরাগে

ভুলিস না, ঐ প্রাসাদে হাসি হেসে-
অনেক রয়েছে, অনেক দেখবি সিন্ধুকে ভরা মণি-মুক্তাগেঁয়ো, অপরিপক্ক বাঁশ, ঘুণে ধরা অসংখ্য ছিদ্রের মালিক; জলের অস্তিত্ত্ব মেলে না এই ছেড়া চালুনিতে
তোদের দেখে একটা আশা মনে জেগে উঠেছে-, আয় সবুজের পথে, আয় মশী হাতে সহস্র পৃষ্ঠায় আঁচড় কাটিঅবশেষে-
চিরকাল রাখবি তোদের হৃদয়ে- বিশ্বাস করি, সাধনা-সঙ্গিতে, সাহিত্যের গন্ডিতে আবার তোদের সাথে দেখা হবেই
ইতি
টগর

টগর এখন কোথায়? আগন্তুককে প্রশ্ন করল দিপুহাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিল, বাঁচবে কি না সন্দেহ! আগান্তুকের এই কথা শুনে দিপু বলে উঠল, না, তা হতে পারে না, আমি যাব তার নিকটতাঁর স্বামী বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা সবাই যাব একসাথে টগর-কে দেখতেএই বলে তাঁরা তিন জন বেরিয়ে পড়ল টগর-এর উদ্দেশ্যে


(ছোট গল্প)

Exclusive Love Story- Atoppor-অতঃপর-(দ্বিতীয় অংশ)

() দ্বিতীয় অংশ
ছোট্ট ছেলে টগর আর ছোট্টটি নেই সে এখন অনেকটাই বড়, বয়সে মাপকাঠিতে ঠিক তোমাদের মত জানালায় বসে ভাবেÑ এখন কি করা যায়? এম. পাস করে টগর জীবন ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরেছে ছোটখাটো একটা চাকরিও আছে বটে লিখতে তার বেশি ভাল লাগে, তাই পড়াশুনা তেমন মনোযোগী ছিল না ছোটবেলা থেকে শৈশব-কৈশর সেতুপুর পল্লীতে কাটে বলে পল্লী মায়ের অনেক রূপ সে দেখেছে সময় পেলেই বসে যায় কবিতা-গানের ডালিতে অনেক রাত তার কবিতা লিখে কাটে ঘুম তার চোখে আসেনা বললে চলে তার শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ নন্দিতাঅনেকটা ঢেউ তুলেছে মানব হৃদয়ে
তবে এই কবিতাটি তাকে আমার কাছে বিচিত্র করে তুলেছে,


রাতের সূর্য

আকাশের বুকে যখন পূর্ণিমার চাঁদ
ছুটে চলেছে
তখন তুমি গভীর নিদ্রায়
স্বপ্নের দীঘিতে সাঁতার কাটো
পদ্ম-পাপড়ির দোলায়
কখনো কখনো
প্রাসাদ ছাপিয়ে চলে আসে
রাজ লক্ষ্মীর উচ্চস্বরের হাসি;
আমি গম্ভীর হয়ে যাই
দুএক টুকরো মেঘ দেখে,
কখনোবা হুতুম পেঁচার ডাকে

আমার চোখ দুটি ভেসে যায়
দূর চাঁদের দেশে, চাঁদের সাথে;
বিরতি পড়ে গভীর নীলে, চাঁদের খেঁয়ায়
কোন চলমান ধবধবে সাদা সূর্য?
আমি ভুল করিনি তার সৌন্দর্য্য দেখতে

সাদা সূর্যই আমার ঘুম ভাঙায়- ডেকে তোলে,
আজও তুলেছে নরম বিছানা থেকে
নিদ্রতুর ঘুম ভাঙিয়ে
তুমি হয়তো দেখতে পাও না কাঁজল আঁকা চোখেতে-
তবে দীর্ঘ দিনের অভ্যাস,
চাঁদের সাথে খেঁয়া পারাপার,
তার সাথে ভেসে বেড়ানো আমার দুটি চোখ
প্রতিনিয়ত দেখছে তোমাকে
কারো প্রতিক্ষাতে নয়,
সাদা সূর্যের দেশে আমি ভেসে চলি
তোমাদের অলখে নিখিলের অসীম সীমানায়

কিছুটা বিরহ আন্দাজ করে প্রশ্ন করি, জবাবটা এমনই-
দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে কিন্তু কবিতার জগত ভিন্ন ভাবের উদয়, আবেগের ৎপাত, উল্লাস ইত্যাদির আনাগোনা সবসময় লেগে থাকে কিন্তু সবার মনে নয় আমার জগতে সবাই নিরস্ত্র, কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা নাই

তার ঘনিষ্ট বন্ধু, সবুজ কর্মঠ কিন্তু খামখেয়ালী দূরালাপনে বেশ কথা হয় তাদের সবুজ তার হাতিয়ার বটে, তার সাথে কথপোকথনে টগর বেশ কাব্য উপজিব্য বিষয় খুঁজে পায় সাহিত্য অনুরাগী টগর-কে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় কিন্তু বাস্তবার অনেক কিছু সে না দেখে লিখে দিতে পারে, ঘটনা কেমন হতে পারে অথবা কি ঘটতে যাচ্ছে

টগর রাত জেগে একটা পত্র লিখল এবং অসংখ্য জল্পনা-কল্পনায় রাত পার করতে থাকে রাত তিনটা, কিন্তু ঘুম আসেনা অনেক দিনের পুরোনো বন্ধু দিপু- সাথে দেখা হয়েছে তার স্বামী বাড়ি না থাকায় আগামীকাল শুক্রবার তার বাড়িতে নিমন্ত্রন আছে তাছাড়া সকল আলাপ শেষ না করেই আসতে হয়েছে কত কথা জমে আছে তার শেষ নেই, কালকে অবশ্যই তাকে বলতে হবে

চিন্তার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ঘুমের দেশে চলে যেতেই স্বপ্ন পরীর আর্বিভাব চাঁদের দেশে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার বায়না, ছোট ছোট বাচ্চাদের হাসি মাখা মুখ আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয় তাকে স্বপ্নে বিভোর, হঠা এলার্ম বেজে উঠলো সকাল সাতটা তার মনে হল, দিপুদের বাড়িতে যেতে হবে, আজ শুক্রবার হন্তদন্ত হয়ে পত্রটি পকেটে গুজে দুটি রুটির সাথে আলু ভাঁজি মুখে পুরে টগর রওনা দিল দিপু- উদ্দেশ্যে-----

Saturday, July 19, 2014

Exclusive Love Story- Atoppor-অতঃপর-(প্রথম অংশ)


প্রথম অংশ
পাড়া-গাঁয়ের ছোটো ছোটো পথ পেরিয়ে খরস্রতা সাগবাড়িয় ও কপোতাক্ষের মাঝে গড়ে উঠা সেতুপুর পল্লীতে উজান-ভাঁটি খেলা করে বর্ষা মৌসুমেচরের কাঁদা-মাটিতে তৈরি আধা-শুকনো বাড়ির ছন্-গোলপাতার ছাউনি মিশে আছে দখিণা বাতাসেকপোতাক্ষ যখন মায়ের মতন তখন সাগবাড়িয়া বৈরীআবার বিপরীত ধারায় প্রবাহিত হয়, কখনো সম ধারায়ভিষণ একাকী তটিনির বুকেতে শুশুকের আনাগোনা বিভ্রান্তি আনে উদাস মনের পথিককেঅচেনা অনেক পাতার ভিড়ে ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়ার সুচারু পায়ে হেঁটে চলা, কখনো গহীন রাতে মাঝিদের নৌকার আওয়াজ সিড়সিড় করে দুকর্ণেনিভৃত পল্লীতে শৈশব গড়ে উঠেছে দিপুষষ্ঠ শ্রেণিতে পদার্পণ তাকে টেনে এনেছে তট-তটিনির মাঝখানেঅজিত সেন -এর সর্ব কনিষ্ট কন্যা হওয়ায়, অনেক অদরের পুত্তলি দিপুসে স্কুলে যায় একলা মনে একলা সঙ্গিতে

দিপু, তার শৈশব স্মৃতিকে ভুলে যেতে বসেছিল ইট-পাথরের বর্গ ক্ষেত্রেশৈশবের বন্ধু টগর আর বিপুল, তাও ভুলতে বসেছে দিপুকিন্তু দিপুকে হঠাৎ তাদের বাড়ি- পেয়ে যাবে তা সে ভাবিনিতাই ছোট বেলার স্মৃতি কিছুটা হলেও উকি দিয়ে উঠলো দিপুর মনেটগরকে বসতে দিয়ে সে ভাবতে শুরু করে----

আমার প্রজাপতি মন/ফড়িংও ডানায়
এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই/যেভাবে মানায়
আমার প্রজাপতি মন/ফড়িংও ডানায়
আমার পায়ে চলা স্যন্ডেলটা/দেখ কত ভারি
ইস্কুলেতে যাই যে আমি/ তা ধিন তা ধি করি
আমি বেণী করি চুলে/আটকানো ফিতায়
আমার বয়ে ভরা ব্যাগটা/কাঁধের উপর রাখি
শ্যামলা বরণ কন্যে আমি/চোখে কাঁজল আঁকি
ফিরতি পথে একলা ফিরি/কান দেইনা কথায়

(অনেকটা দিকভোলা চঞ্চলা নয়নে মেতে থাকে দিনভর স্কুলে।)

কিরে ---, থমকে গেলি যে? হঠাৎ টগর বলে উঠলো দিপু-কেদিপু হতচকিত হয়ে বলল, একটু শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম, সেই কপোতাক্ষের পাড়ে- সেতুপুর গ্রামেতোর কি মনে আছে সেতুপুর গাঁয়ের কথা, টগর? টগর এক বাক্যে বলে উঠলো, কি যে বলিস তুই, থাকবে না আবার, ওটাতো আমার গ্রামহ্যাঁ, তাইতোআসলে ভাবতে ভাবতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলামদিপু-র কথা শুনে টগর জিজ্ঞাসা করলো, তোর কি মনে পড়ে ওই গ্রামের কথা, দিপু? পড়ে না আবার, খুব পড়েকিন্তু এক যুগ কেটে গেছে, সব কি আর আর আগের মতো আছে রে---!
নারে দিপু, নেইঅনেক বদলে গেছে, সেই মেঠ পথ হারাতে বসেছে আধুনিক ইট-পাথরেতাছাড়া----
তাছাড়া কি?
প্রতি বছর নদীর গ্রাস, কেউ সাহস পায়না সেখানে বাস করতেএই ভাল, তো ওই খারাপ
কেন, আগে তো অমন ছিল না?
আগে তো এমন ছিল না! আগে কি আমাদের বয়স দুই যুগ ছিল, ন্যাকা কোথাকার! মুখ ভেংচিয়ে টগর বলল
তা না, তবে---
শোন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে এমন ঘটেছে আর সেদিন এখন আর নেইবাদ দে সেসব কথা, এবার তোর খবর বল
আমার কথা পরে শুনিস, আগে চা করে আনি- তার পরে ঠান্ডা মাথায় কথা বলিসএকথা শুনেই টগর বলে উঠলো- চা পান করলে তো মাথা গরম হয়ে যাবে, দিপু! দিপু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- তোর ফাজলামোটা এখনো যাইনি, তাই না?
টগর-ও একগাল গেসে বলল, কি করবো অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই ভুলতে পারি না

এই বলে একটা তোয়ালে নিয়ে টগর টিওবয়েল-এর দিকে গেলহাত-মুখ ধুয়ে উপরের দিকে চাইতেই দেখতে পেল এক টুকরো মেঘ ভেসে যায়, কেউ যেন তাকে ঠেলে নিয়ে যায়কোথায় যায়, কার কাছে যায়- এ প্রশ্নে বিভোর টগরের মনে একটা গানের উদয় হলÑ




এক টুকরো মেঘ/ভেসে বেড়ায় সারা বেলা
মনের লুকানো কথা/ বয়ে নিয়ে করে খেলা
কখনো সূর্যের কোলে/কখনো বা আঁড়ালে
উঁকি দিয়ে যায় শুধু/ তার পানে তাকালে
দীঘির শান্ত জলে/সে ঝরে পড়ে একেলা
কখনো মাথার উপর/কখনো বা গাছে
এই দেখি সামনে বসা/ নয়তোবা পিছে
মনের জানালা খুলে/ গেয়ে যায় ওই সুরেলা

হঠাৎ অদ্ভুত একটা আওয়াজে মেঘের ভেতর থেকে তার কানে আঘাত করলোমেঘের গর্জন, কিন্তু আকাশে তো সূর্য- বৃষ্টির আশংখা নেই, তবে---?
মুহূর্তে একটা রক্তাক্ত কবুতর এস পড়লো টগরের পায়ের নিকটএতক্ষণে বিষয়টা পরিস্কার হল, কেউ বন্দুকের গুলি ছুড়েছিল পাখিটাকে হত্যা করতে, তারই আওয়াজ ছিল ওটাকিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে, ততক্ষণে মরে সারাশহরে এসে আরেকটা নতুন অভিজ্ঞতা হল তারগ্রামে ঘুঘু মারতে দেখেছে কিন্তু কবুতর মারতে দেখেনি এভাবেদু-এক মিনিট যেতেই একটা বালক পাচিল টপকে পাখিটা চাইলো
ভাইয়া কবুতরটি আমাদেরও আচ্ছা, কিন্তু এভাবে মারলে কেন? বোকা প্রকৃতির প্রশ্ন শুনে ছেলেটি বলল, কেন- জানেন না, খাওয়ার জন্য
টগর কখনো শোনেনি কবুতর খাওয়ার কথাকিছুটা বিমর্ষ হয়ে সে বলে উঠলো, এভাবে কেউ কবুতর মারে!

এখানে কি করছিস, টগর? চমকে উঠে বলল, না-- কিছু না
দিপু বলল, টগর, রক্ত কিসের, কেটে যায়নি তো? কার সাথে কথা বলছিলি? আর অমন বেসুরো গলায় গান গাইছিল কে?
আর বলিস না, কোত্থেকে এক বালক এল, গুলি বিদ্ধ একটা কবুতরকে নিতেআমি অবাক হয়ে গেলাম, এভাবে কি কেউ কবুতর মারে
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, সন্ধ্যায় শহর এলাকায় মানুষও মরেএকথা শুনে টগরের হাত-পা আড়ষ্ট হয়ে উঠলোদিপু শহরের এ-রূপ দেখে অভ্যস্থ হয়ে গেছে তাই কোন প্রতিক্রিয় নেই তার মনে
দিপু টগর-কে ভিতরে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলতাদের ঘরের ভিতর অনেক মেহমান আছে, তাছাড়া সংসারটা একটু ছিমছামদিপু টগর-কে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলএকটা দেবর আছে তাকেও দেখালতারপর দিপু-র বড় মেয়ে ও ছোট ছেলেকে বলল, উনি তোমাদের মামা হন
মামা বলতেই ভাগ্নের জামা খোলা শুরুআর রক্ষে নেইদিপু-র কোন ভাই না থাকায়, মামাকে পেয়ে একেবারে নাস্তানাবোধ করে ফেললঅনেক দ্রুতই কেটে গেল বিকেলটা টগর-এর
দিপু-র স্বামী সরকারী অফিসার- তাই এখনো বাড়িতে ফেরেনিতাই বেশ ব্যাস্ততা ও আদর যত্নের মধ্য দিয়ে দিনটা কাটিয়ে টগর চলে গেল।--------

                                               

Last 7 Days!