Saturday, July 19, 2014

Exclusive Love Story- Atoppor-অতঃপর-(প্রথম অংশ)


প্রথম অংশ
পাড়া-গাঁয়ের ছোটো ছোটো পথ পেরিয়ে খরস্রতা সাগবাড়িয় ও কপোতাক্ষের মাঝে গড়ে উঠা সেতুপুর পল্লীতে উজান-ভাঁটি খেলা করে বর্ষা মৌসুমেচরের কাঁদা-মাটিতে তৈরি আধা-শুকনো বাড়ির ছন্-গোলপাতার ছাউনি মিশে আছে দখিণা বাতাসেকপোতাক্ষ যখন মায়ের মতন তখন সাগবাড়িয়া বৈরীআবার বিপরীত ধারায় প্রবাহিত হয়, কখনো সম ধারায়ভিষণ একাকী তটিনির বুকেতে শুশুকের আনাগোনা বিভ্রান্তি আনে উদাস মনের পথিককেঅচেনা অনেক পাতার ভিড়ে ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়ার সুচারু পায়ে হেঁটে চলা, কখনো গহীন রাতে মাঝিদের নৌকার আওয়াজ সিড়সিড় করে দুকর্ণেনিভৃত পল্লীতে শৈশব গড়ে উঠেছে দিপুষষ্ঠ শ্রেণিতে পদার্পণ তাকে টেনে এনেছে তট-তটিনির মাঝখানেঅজিত সেন -এর সর্ব কনিষ্ট কন্যা হওয়ায়, অনেক অদরের পুত্তলি দিপুসে স্কুলে যায় একলা মনে একলা সঙ্গিতে

দিপু, তার শৈশব স্মৃতিকে ভুলে যেতে বসেছিল ইট-পাথরের বর্গ ক্ষেত্রেশৈশবের বন্ধু টগর আর বিপুল, তাও ভুলতে বসেছে দিপুকিন্তু দিপুকে হঠাৎ তাদের বাড়ি- পেয়ে যাবে তা সে ভাবিনিতাই ছোট বেলার স্মৃতি কিছুটা হলেও উকি দিয়ে উঠলো দিপুর মনেটগরকে বসতে দিয়ে সে ভাবতে শুরু করে----

আমার প্রজাপতি মন/ফড়িংও ডানায়
এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই/যেভাবে মানায়
আমার প্রজাপতি মন/ফড়িংও ডানায়
আমার পায়ে চলা স্যন্ডেলটা/দেখ কত ভারি
ইস্কুলেতে যাই যে আমি/ তা ধিন তা ধি করি
আমি বেণী করি চুলে/আটকানো ফিতায়
আমার বয়ে ভরা ব্যাগটা/কাঁধের উপর রাখি
শ্যামলা বরণ কন্যে আমি/চোখে কাঁজল আঁকি
ফিরতি পথে একলা ফিরি/কান দেইনা কথায়

(অনেকটা দিকভোলা চঞ্চলা নয়নে মেতে থাকে দিনভর স্কুলে।)

কিরে ---, থমকে গেলি যে? হঠাৎ টগর বলে উঠলো দিপু-কেদিপু হতচকিত হয়ে বলল, একটু শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম, সেই কপোতাক্ষের পাড়ে- সেতুপুর গ্রামেতোর কি মনে আছে সেতুপুর গাঁয়ের কথা, টগর? টগর এক বাক্যে বলে উঠলো, কি যে বলিস তুই, থাকবে না আবার, ওটাতো আমার গ্রামহ্যাঁ, তাইতোআসলে ভাবতে ভাবতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলামদিপু-র কথা শুনে টগর জিজ্ঞাসা করলো, তোর কি মনে পড়ে ওই গ্রামের কথা, দিপু? পড়ে না আবার, খুব পড়েকিন্তু এক যুগ কেটে গেছে, সব কি আর আর আগের মতো আছে রে---!
নারে দিপু, নেইঅনেক বদলে গেছে, সেই মেঠ পথ হারাতে বসেছে আধুনিক ইট-পাথরেতাছাড়া----
তাছাড়া কি?
প্রতি বছর নদীর গ্রাস, কেউ সাহস পায়না সেখানে বাস করতেএই ভাল, তো ওই খারাপ
কেন, আগে তো অমন ছিল না?
আগে তো এমন ছিল না! আগে কি আমাদের বয়স দুই যুগ ছিল, ন্যাকা কোথাকার! মুখ ভেংচিয়ে টগর বলল
তা না, তবে---
শোন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে এমন ঘটেছে আর সেদিন এখন আর নেইবাদ দে সেসব কথা, এবার তোর খবর বল
আমার কথা পরে শুনিস, আগে চা করে আনি- তার পরে ঠান্ডা মাথায় কথা বলিসএকথা শুনেই টগর বলে উঠলো- চা পান করলে তো মাথা গরম হয়ে যাবে, দিপু! দিপু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- তোর ফাজলামোটা এখনো যাইনি, তাই না?
টগর-ও একগাল গেসে বলল, কি করবো অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই ভুলতে পারি না

এই বলে একটা তোয়ালে নিয়ে টগর টিওবয়েল-এর দিকে গেলহাত-মুখ ধুয়ে উপরের দিকে চাইতেই দেখতে পেল এক টুকরো মেঘ ভেসে যায়, কেউ যেন তাকে ঠেলে নিয়ে যায়কোথায় যায়, কার কাছে যায়- এ প্রশ্নে বিভোর টগরের মনে একটা গানের উদয় হলÑ




এক টুকরো মেঘ/ভেসে বেড়ায় সারা বেলা
মনের লুকানো কথা/ বয়ে নিয়ে করে খেলা
কখনো সূর্যের কোলে/কখনো বা আঁড়ালে
উঁকি দিয়ে যায় শুধু/ তার পানে তাকালে
দীঘির শান্ত জলে/সে ঝরে পড়ে একেলা
কখনো মাথার উপর/কখনো বা গাছে
এই দেখি সামনে বসা/ নয়তোবা পিছে
মনের জানালা খুলে/ গেয়ে যায় ওই সুরেলা

হঠাৎ অদ্ভুত একটা আওয়াজে মেঘের ভেতর থেকে তার কানে আঘাত করলোমেঘের গর্জন, কিন্তু আকাশে তো সূর্য- বৃষ্টির আশংখা নেই, তবে---?
মুহূর্তে একটা রক্তাক্ত কবুতর এস পড়লো টগরের পায়ের নিকটএতক্ষণে বিষয়টা পরিস্কার হল, কেউ বন্দুকের গুলি ছুড়েছিল পাখিটাকে হত্যা করতে, তারই আওয়াজ ছিল ওটাকিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে, ততক্ষণে মরে সারাশহরে এসে আরেকটা নতুন অভিজ্ঞতা হল তারগ্রামে ঘুঘু মারতে দেখেছে কিন্তু কবুতর মারতে দেখেনি এভাবেদু-এক মিনিট যেতেই একটা বালক পাচিল টপকে পাখিটা চাইলো
ভাইয়া কবুতরটি আমাদেরও আচ্ছা, কিন্তু এভাবে মারলে কেন? বোকা প্রকৃতির প্রশ্ন শুনে ছেলেটি বলল, কেন- জানেন না, খাওয়ার জন্য
টগর কখনো শোনেনি কবুতর খাওয়ার কথাকিছুটা বিমর্ষ হয়ে সে বলে উঠলো, এভাবে কেউ কবুতর মারে!

এখানে কি করছিস, টগর? চমকে উঠে বলল, না-- কিছু না
দিপু বলল, টগর, রক্ত কিসের, কেটে যায়নি তো? কার সাথে কথা বলছিলি? আর অমন বেসুরো গলায় গান গাইছিল কে?
আর বলিস না, কোত্থেকে এক বালক এল, গুলি বিদ্ধ একটা কবুতরকে নিতেআমি অবাক হয়ে গেলাম, এভাবে কি কেউ কবুতর মারে
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, সন্ধ্যায় শহর এলাকায় মানুষও মরেএকথা শুনে টগরের হাত-পা আড়ষ্ট হয়ে উঠলোদিপু শহরের এ-রূপ দেখে অভ্যস্থ হয়ে গেছে তাই কোন প্রতিক্রিয় নেই তার মনে
দিপু টগর-কে ভিতরে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলতাদের ঘরের ভিতর অনেক মেহমান আছে, তাছাড়া সংসারটা একটু ছিমছামদিপু টগর-কে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলএকটা দেবর আছে তাকেও দেখালতারপর দিপু-র বড় মেয়ে ও ছোট ছেলেকে বলল, উনি তোমাদের মামা হন
মামা বলতেই ভাগ্নের জামা খোলা শুরুআর রক্ষে নেইদিপু-র কোন ভাই না থাকায়, মামাকে পেয়ে একেবারে নাস্তানাবোধ করে ফেললঅনেক দ্রুতই কেটে গেল বিকেলটা টগর-এর
দিপু-র স্বামী সরকারী অফিসার- তাই এখনো বাড়িতে ফেরেনিতাই বেশ ব্যাস্ততা ও আদর যত্নের মধ্য দিয়ে দিনটা কাটিয়ে টগর চলে গেল।--------

                                               

3 comments:

  1. অনেক ভাল লেগেছে। কিন্তু বাকি অংশ কখন পাব!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সাথেই থাকুন!!!! খুব শিঘ্রই পেয়ে যাবেন। আগামী কাল দুপুরে। ধন্যবাদ!!!!!!

      Delete
  2. নতুন নতুন কবিতা পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটে
    www.valobasargolpo2.xyz

    ReplyDelete

Last 7 Days!